সামাজিক ক্রমবিকাশ ও মানুষের ‘ভাগ্য’ পরিবর্তন ঘটেছে মোটামুটি
সমান্তরাল ধারায়। আদিতে, সমাজে ব্যক্তি মালিকানার প্রথা চালু হওয়ার আগে
মানুষ যাবতীয় সামাজিক উৎপাদন নিজেদের মধ্যে সমান ভাগে ‘ভাগ’ করে নিত। এই
‘ভাগে’ পওয়া সম্পদ ছিল তার ‘ভাগ্য’ {ভাগ্ + য (যাওয়ন/ যোগ্যতা/ যুজ্
ধাতু)}। সনাতন যুগের জ্ঞানী-কর্মীর যৌথসমাজে মানুষ নিজের কাজের (কর্মের)
বিণিময়ে ও কাজের পরিমাণ অনুযায়ী ভাগ পেত। তখন ভাগ্য হল ‘কর্মফল’।
বৈদিক যুগে সম্পদের অধিকার ছিল বর্ণাশ্রম অনুযায়ী। চতুর্বর্ণ, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্র যথাক্রমে শাদা, লাল, হলুদ ও কালো বর্ণের তিলক ধারণ করত। নিজ-নিজ গোষ্ঠী বা গোত্র অনুসারে সেই তিলকের নকশা পরিবর্তন হত। -আজও বৈষ্ণবদের মধ্যে যে প্রথা দেখা যায়। তিলক আঁকা হয় কপালে বা ললাটে। সে’যুগে তিলক দেখে মানুষের সামাজিক অবস্থান ও সেই সাথে সামাজিক সম্পদের কতটুকু ‘ভাগ’ তার অধিকারে যাবে –তার নির্ণয় হত। তাই এই সময় থেকে ভাগ্য–কে ‘ললাটলিখন’ বা ‘কপালের রেখা’ হিসেবে উল্লেখ করা শুরু হল।
বৈদিক যুগে সম্পদের অধিকার ছিল বর্ণাশ্রম অনুযায়ী। চতুর্বর্ণ, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্র যথাক্রমে শাদা, লাল, হলুদ ও কালো বর্ণের তিলক ধারণ করত। নিজ-নিজ গোষ্ঠী বা গোত্র অনুসারে সেই তিলকের নকশা পরিবর্তন হত। -আজও বৈষ্ণবদের মধ্যে যে প্রথা দেখা যায়। তিলক আঁকা হয় কপালে বা ললাটে। সে’যুগে তিলক দেখে মানুষের সামাজিক অবস্থান ও সেই সাথে সামাজিক সম্পদের কতটুকু ‘ভাগ’ তার অধিকারে যাবে –তার নির্ণয় হত। তাই এই সময় থেকে ভাগ্য–কে ‘ললাটলিখন’ বা ‘কপালের রেখা’ হিসেবে উল্লেখ করা শুরু হল।
বাণিজ্যতন্ত্রের যুগে শুরু হল ভাগ্যে বিভিন্ন ‘গ্রহ-নক্ষত্রে’র প্রভাব। এই
‘গ্রহ-নক্ষত্র’রা হলেন সূর্য্য (রাষ্ট্রীয় পুঁজি), চন্দ্র (বণিক পুঁজি),
মঙ্গল (চিরপ্রচলিত আচার, যা কল্যাণকারী), বৃহস্পতি (‘সুর’ বা বাণিজ্যের
উপযোগী আইন-ব্যবস্থার অথবা ‘দানের মাধ্যমে তুষ্টকারী’ ‘দেবতা’দের গুরুগণ),
শুক্র (শুক্রাচার্য্য বা ‘সুর’ বিরোধী বিকল্প ব্যবস্থার গুরুগণ), রাহু
(রাষ্ট্রীয় পুঁজি ও বণিক পুঁজি –উভয়কেই যে ‘গ্রাস’ করতে চায়। সামাজিক
বিশৃঙ্খলা), শনি (যার দৃষ্টি পড়লে কিছু না কিছু মূল্য চোকাতেই হয়,
-জরিমানা, রাজস্ব/ শুল্ক সংগ্রাহক), বুধ (চন্দ্রবংশ বা বণিকপুঁজির
পৃষ্ঠপোষকদের প্রতিষ্ঠাতা), ইত্যাদি।
ওপরের অনুচ্ছেদে উল্লিখিত ‘ভাগ্যনিয়ন্ত্রক’দের মধ্যে ‘বুধ’ শব্দটি/ সত্তাটি নিয়ে আরও কিছু ব্যাখ্যা প্রাসঙ্গিক। ভারতীয় অলঙ্কারশাস্ত্র (কাব্যপ্রকাশঃ, প্রথম উল্লাস) অনুসারে ‘বুধ’ শব্দের একটি অর্থ ‘বৈয়াকরণ’ । -যার অর্থ নিছক ‘grammarian’ ধরে বসলে তা অর্থ সংকোচনের শিকার হয়। ভোলা উচিৎ নয়, ‘ব্যাকরণ’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কিন্তু ‘বিশেষভাবে বিশ্লেষণ’, সহজ কথায় ‘নিয়ম-নীতি’। যা কিনা ভাষার পাশাপাশি সামাজিক বা অন্য কোনও ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। (‘ক্রিকেটের ব্যাকরণ’ বা ‘ছবি আঁকার ব্যাকরণ’ –গোছের শব্দবন্ধ তো হামেশাই ব্যবহার করা হয়।) সুতরাং, ‘He who pays the piper calls the tune.’ –প্রবাদটির বাস্তবতা মানলে বণিকপুঁজির রমরমার সময়ে তার পৃষ্ঠপোষকেরাই যে সমাজ পরিচালনার নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করবে, -তেমনটিই তো স্বাভাবিক!
ওপরের অনুচ্ছেদে উল্লিখিত ‘ভাগ্যনিয়ন্ত্রক’দের মধ্যে ‘বুধ’ শব্দটি/ সত্তাটি নিয়ে আরও কিছু ব্যাখ্যা প্রাসঙ্গিক। ভারতীয় অলঙ্কারশাস্ত্র (কাব্যপ্রকাশঃ, প্রথম উল্লাস) অনুসারে ‘বুধ’ শব্দের একটি অর্থ ‘বৈয়াকরণ’ । -যার অর্থ নিছক ‘grammarian’ ধরে বসলে তা অর্থ সংকোচনের শিকার হয়। ভোলা উচিৎ নয়, ‘ব্যাকরণ’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কিন্তু ‘বিশেষভাবে বিশ্লেষণ’, সহজ কথায় ‘নিয়ম-নীতি’। যা কিনা ভাষার পাশাপাশি সামাজিক বা অন্য কোনও ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। (‘ক্রিকেটের ব্যাকরণ’ বা ‘ছবি আঁকার ব্যাকরণ’ –গোছের শব্দবন্ধ তো হামেশাই ব্যবহার করা হয়।) সুতরাং, ‘He who pays the piper calls the tune.’ –প্রবাদটির বাস্তবতা মানলে বণিকপুঁজির রমরমার সময়ে তার পৃষ্ঠপোষকেরাই যে সমাজ পরিচালনার নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করবে, -তেমনটিই তো স্বাভাবিক!
No comments:
Post a Comment