হাফ্-ডে’ বাঁচাতে মেয়েটি পড়ি-মরি ছুটতে ছুটতে অফিস-বাড়িতে ঢোকে। হাতে
মাত্র মিনিট তিনেক। আট তলা নড়বড়ে একখানা বাড়ি, আর তার ঘরঘরে লিফ্ট! -একবার
ওপরে গেলে নামতে পাক্কা দশ মিনিট! মেয়েটি কোনওমতে বন্ধ হয়ে আসা দরজার
ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে শেষমুহূর্তে লিফ্ট থামালো। ভেতরে সেঁধিয়ে হাঁপাতে
হাঁপাতেই লিফ্টম্যানকে বলল, ‘একটু ২-এ দেবেন প্লীজ্।'... –বলতেই অসভ্য
চাপা হাসির শব্দ আসে পেছন থেকে। -চারতলার সেই লোকটা! –মেয়ে দেখলেই নন্-ভেজ
ইয়ার্কি মারার স্বভাব। লোকটার নজরও খুব অস্বস্তিকর। মেয়েটি অভ্যেসমতো গায়ের কুর্তি টেনেটুনে ঠিক করে নেয়। কিন্তু, মাথায় ঢোকে না, হাসার মতো এখন কী এমন করল!
নিজের চেয়ারে বসতে-বসতেই পরিস্কার হয় ধাঁধা। -জানোয়ারটার অসভ্য মস্তিষ্ক
‘২-এ দেবেন’-কে ‘দুইয়ে দেবেন’ করে নিয়েছে!... না, রাগ হয় না তেমন। গা-সওয়া
হয়ে গিয়েছে। আর সত্যি বলতে কি চাকরি, সংসার, সমাজ –সবাই মিলে দুইয়ে-ই তো
নিচ্ছে ওকে, ওদেরকে। ‘নহ মাতা নহ কন্যা...’। কন্যা, দুহিতা -‘যাকে দোহন করা
হয়’। গোড়ায় তা-ই ছিল, পরে হয়তো চক্ষুলজ্জায় বা দয়াপরবশঃ নিপাতনে ‘সিদ্ধ’
করে ‘যে দোহন করে’ বলা হয়েছে! নিচে টিকাকার লিখেছে, ‘বেদের যুগের দুধ
দোয়াতো’ –কি হাস্যকর! ‘বিবাহকালে পিতার ধনসম্পদ দোহন করে।’ –কি অপমানকর!
‘দোহনকৃত’কে দেওয়া হল ‘দোহনকারী’র অপবাদ! বস্তাপচা হিঁদুয়ানির প্রভাব? কই
পালিভাষার ‘দুহিত্বা’ও অন্য কোনও পরিচয় দেয় নি। তাহলে কি আজও
ইংল্যান্ড-আমেরিকার ‘ডটার্’, পারস্যের ‘দোখ্তার’, জার্মানির ‘দখ্তার’
গ্রীসের ‘দ্যিগাতেরা’ –তারা সবাই ওর-ই মতো ‘দোহনকৃত’? স্থান, কাল
নির্বিশেষে এই দোহন মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই কি ভবিতব্য ছিল না!
‘দিদি শুনছেন?’ –শুভময়। মুখচোরা মানুষটি বয়সে ওর চেয়ে বড়ো-ই হবে, তবু ‘দিদি’ ডাকে। উদয়ান্ত খাটে, তাও কথায় কথায় বসের ধমক খায়। বোনের বিয়ে, ভাই-এর ইঞ্জিনীয়ারিং, বাবার হঠাৎ বাইপাস, মাথায় একসঙ্গে তিন-চারখানা লোনের বোঝা নিয়ে চলতে গিয়ে পদে পদে হোঁচট খায়। শুনেছে, কোনও এক সময়ে এই শুভময়বাবুর একজন বান্ধবী ছিল। মাইনের টাকা-ক’টির ওপর বরাদ্দ সব যোগ-বিয়োগের অত্যাচারের পর যা পড়ে থাকে, তার ভরসায় ‘ঘর বাঁধা’ আর হয়ে ওঠে নি।
মেয়েটি শূন্যদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। - শুধু মেয়েরাই তাহলে ‘দুহিতা’ হয় না!...
‘দিদি শুনছেন?’ –শুভময়। মুখচোরা মানুষটি বয়সে ওর চেয়ে বড়ো-ই হবে, তবু ‘দিদি’ ডাকে। উদয়ান্ত খাটে, তাও কথায় কথায় বসের ধমক খায়। বোনের বিয়ে, ভাই-এর ইঞ্জিনীয়ারিং, বাবার হঠাৎ বাইপাস, মাথায় একসঙ্গে তিন-চারখানা লোনের বোঝা নিয়ে চলতে গিয়ে পদে পদে হোঁচট খায়। শুনেছে, কোনও এক সময়ে এই শুভময়বাবুর একজন বান্ধবী ছিল। মাইনের টাকা-ক’টির ওপর বরাদ্দ সব যোগ-বিয়োগের অত্যাচারের পর যা পড়ে থাকে, তার ভরসায় ‘ঘর বাঁধা’ আর হয়ে ওঠে নি।
মেয়েটি শূন্যদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। - শুধু মেয়েরাই তাহলে ‘দুহিতা’ হয় না!...
No comments:
Post a Comment