আমলা

প্রকৃতিবাদ বা নেচারালিজম অনুসারে কোনও অতিপ্রাকৃতিক অথবা অধিভৌতিক নয়, একমাত্র প্রাকৃতিক নিয়ম ও শক্তিই জগৎকে পরিচালিত করতে পারে। ১৮৬৬ সালে শ্রী রামকমল বিদ্যালঙ্কারের ‘প্রকৃতিবাদ অভিধান’ নামে একটি অভাধান প্রকাশিত হয়। এর পরপরই শ্রী বরদাপ্রসাদ মজুমদার প্রকাশ করেন ‘প্রকৃতি-নির্ণয় অভিধান’। দ্বিতীয় অভিধানটি প্রথমটির কুম্ভীলকবৃত্তি বা প্ল্যাগারিজমে দুষ্ট –অভিযোগে মামলা-মোকদ্দমাও হয়। আদালতে প্রমাণিত হয়েছিল সেই অভিযোগ সঠিক তো বটেই, সেই সাথে ‘প্রকৃতি-নির্ণয় অভিধান’টি আগাগোড়া ত্রুটিপূর্ণ। -সেখানে ‘ঋষ্যশৃঙ্গ’ শব্দের অর্থ ‘দশরথের ভগিনীপতি’ (আসলে ‘জামাতা’) ও ‘সীতা’ শব্দের অর্থ ‘রামের জননী’ দেওয়া ছিল! সম্ভবতঃ, এই মোকদ্দমার পর থেকেই ‘সাতকাণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতা রামের মা’ –বাগ্‌ধারাটির প্রচলন হয়। (অবশ্য বৌদ্ধ রামায়ণে সীতাকে রামের ভগিনী বলা হয়েছে, যাকে তিনি বনবাসের পর বিবাহ করেন, -সে’ প্রসঙ্গ অন্য।)...
যাই হোক, এই ‘প্রকৃতিবাদ অভিধান’ অনুসারে ‘বন’ শব্দের একটি অর্থ ‘সেবা করা’। সেই ‘বন’ থেকে জাত হয় ‘বান’ (বন+ষ্ণ)। এই ‘সেবা হইতে জাত’ ফলাফল (বান) যে গ্রহণও করে আবার দানও করে (র), রক্ষণও করে আবার ভক্ষণও করে -সে হল ‘বানর’। সুতরাং, কপি বা শাখামৃগ (বন থেকে জাত ফল যখন আম, জাম, কলা, ইত্যাদি) ছাড়াও ‘বানর’ শব্দের আরেকটি (বর্তমানে অপ্রচলিত) অর্থ হল রাজার/ রাষ্ট্রের (জনসেবা যার ধর্ম্ম) একশ্রেণীর কর্মচারী। বানর = ‘বা বিকল্পিত নরঃ’ (শব্দকল্পদ্রুম)।
‘সংস্কৃত - আমলক> প্রাকৃত - আমলঅ> বাংলা - আমলা; এর অর্থ আমলকী গাছ, আমলকী, সরকারি কর্মচারী, মুহুরি, কেরানি প্রভৃতি। অনেকের মতে, আরবী ‘আমলা’ থেকে বাংলায় এসেছে, যার অর্থ সরকারি কর্মচারী, কেরানি, মুহুরি ইত্যাদি। কিন্তু ‘বেদ’-এ আমলা শব্দটি রয়েছে। কিছু প্রাচীন অভিধানেও ‘আমলা’ শব্দের অর্থ বানর পাওয়া যায় {রামচন্দ্র শর্মার ‘বঙ্গভাষাভিধান’ (১৮১৭) অথবা জগন্নাথ প্রসাদ মল্লিকের ‘শব্দকল্পতরঙ্গিনী’ (১৮৩৮)}।...

No comments:

Post a Comment